হয়তো আর দশটা সাধারন গ্রহণযোগ্য বিষয়ের মতই সমপ্রেম বিষয়টা গ্রহণযোগ্য হতো সমাজে যদি না অন্ধ স্বার্থপর ধর্মগুলো তাদের নিজেদের পক্ষে এই বিষয় গুলো থেকেও বিভিন্ন রকম ফায়দা লুট করতে পারত। এই ধরা যাক সাধারণত একজন পুরুষ আর নারীর সম্পর্ক কেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সম্পর্ক হিসেবে মান নির্ধারণ পূর্বক অনন্য সকল স্বাভাবিক সম্পর্ক কে অস্বাভাবিক ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মময় সমাজ বাবস্থার সূচনা ঘটলো। পৃথিবীর শুরু থেকেই সমলিঙ্গের সম্পর্ক প্রতিটি প্রাণীকুলেই বিদ্যমান , এমন না যে এরকম বিষয়টা হটাত করেই উদ্ভব হয়েছে আজকের পৃথিবীতে । মানব ইতিহাসের যে ভঙ্গুর সময়গুলোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর প্রখর ধুরন্ধর মানুষদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম নামক অনুশাসনগুলো প্রকাণ্ড আকার ধারন করলো, আর তার জন্য যত ক্ষতিপূরণ মানব সভ্যতা কে দিতে হল খুব সম্ভবত প্রাগৈতিহাসিক যুগের দৈত্যাকৃতির ডাইনোসররাও এত ক্ষতির বোঝা বহন করে নাই। মানবকূলের সূচনালগ্ন থেকেই নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা থাকার কারনে , আর সৃজনশীল কাজে বেশি আগ্রহের কারনেই মুলত তাদেরকে খুব সহজেই গৃহস্থলী নামক একটা ছোট পরিসরে আটকানো গেছে। আর পরবর্তীতে তাদের প্রজনন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চলেছে একেকটি সম্প্রদায়ের সদস্য বৃদ্ধির কাজ।
আক্ষেপের বিষয় যে সমলিঙ্গের মধ্যকার সম্পর্ক গুলো এক্ষেত্রে সম্প্রদায় গুলোর সদস্য বৃদ্ধিতে সরাসরি অবদান রাখতে সফল না হওয়ায় তাদের উপযোগীতা লোপ পায় এবং তাদের বেঁচে থাকাটা ঐ সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে একরকম অপ্রয়োজনীয় মনে হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তাদেরকে বিকৃতভাবে মারার মাধ্যমে অপসারণ পূর্বক সমাজ দায় মুক্ত হতো, যে বিষয়টিই পরবর্তীতে বিভিন্ন ধর্মের অন্যতম একটি প্রথা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। আজকে যদি আমরা এভাবে চিন্তা করি যে সকল ধর্মের প্রচারকদের মধ্যে গুটিকয়েক প্রচারক তাদের শরীরে গে জিন নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন, পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মেই এটা হতে পারতো বা পারেই। কিন্তু তারা হয়তো সম্প্রদায় গুলতে নিজেদের ক্ষমতার ভরাডুবি যাতে না ঘটে সেই জন্য দিব্বি দুইমুখি সম্পর্ক চালিয়ে গেলেন , সাধারণত ক্ষমতা রক্ষার্থে নারী সঙ্গটা বেশি উপভোগ করেন দেখিয়ে হয়তো হটাত সমকাম বিদ্বেষী ভাব দেখাতে থাকলেন। সাক্ষী অপসারনের চেষ্টায় সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা করে কিছু আইনও চালু করে দিলেন যে পাথর ছুঁড়ে জনসম্মুখে সমকামিদের মৃত্যুদান করা, অথবা তাদেরকে সমাজের নিকৃষ্টতম জীব হিসেবে বিবেচনা করে নির্বাসিত এলাকায় প্রেরন করা।
আজকের দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম তেলসমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাই এর সুলতান হাসানাল বলিখাও হয়তবা তার পূর্বপুরুষ দের গৌরব ধরে রাখার জন্য সমলিঙ্গের মানবিক সম্পর্ক গুলোর বিরুদ্ধে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে তাদের মেরে ফেলার লোভনীয় শরিয়া আইনটা গ্রহন করে নিলেন। হয়ত এটার কারনে উনার নিজেকে অনেক হাল্কা অনুভব হবে এটা ভেবে যে উনি যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন উনার সম্রদায়ের লোকজন তথা একই ধর্মের দেশগুলো দেখবে সুলতান নারী সম্পর্ক ব্যাপক পরিমাণে উপভোগ করেন, তাই উনি যে খুব ভালোভাবে তার ধর্মকে রক্ষা করছেন তার পুরস্কার সরূপ উনি বেহেস্তে কয়েকগুন বেশী নারীসঙ্গ পাবেন তার আর কোন দ্বিমত নেই। আর তার জীবদ্দশায় ব্রুনাইএর অর্থনীতি যে সহযোগী দেশগুলোর বীণীয়োগে ফূলে ফেঁপে উঠবে অথবা এই আইনের কারণে নিজ ধর্মের অনুসারীদের কাছে তার দেশ অন্যতম একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান হয়ে উঠবে তা উনি কল্পনা করতেই পারেন। নিজের সমাজে থাকলে হয়তো পশুর মতো জবাই হতাম নিজের স্বত্বার জন্য , ব্রুনেই এর সমাজে জন্মালে হয়তো বরন কোরতে হোতো প্রস্তরমৃত্যু, আরও কতো যায়গায় তো কতো কিছু, হাজার হলেও আমাদের জীবনের বিনিময়ে হয়ে যায় কতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগুলোর শুদ্ধতার শুদ্ধিপরীক্ষা। এত বৃহৎ স্বার্থের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা আর সামাজিক অবস্থান নিশ্চিত করার কথা চিন্তা করে বা তার জন্য আবেদন করে মানব দুনিয়াকে আর লজ্জা দিতে ইচ্ছে করে না।