সমস্ত আরব  জুড়ে ইহুদিদের অনেকগুলি গোষ্টী ছিল এবং তারা  ছিল বিপুল ধন সম্পদের অধিকারী। প্রথম যুগের মুসলমানরা এদের ধন সম্পত্তি আত্নসাত করেই শক্তিশালী হয়। কাইনুকা, নাজির, কুরাইজা, খায়বার এবং মুত্তালিক গোষ্টিকে উতখাত করে যে সম্পদ আসে তার সবটাই হযরত মুহাম্মদ নিয়ে নেন। কুরাইজা ধ্বংসের ফলে যে গণিমতের মাল পাওয়া যায় তার পরিমান ৪০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা (দিনার)। এই ধন সম্পদ লুট করার কৌশলও আছে। হাদিস সহি মুসলিম এর ৪৬৩ নং হাদিসে এরকম একটি বিবরণ আছে। এই হাদিসের বক্তা আবু হুরাইয়া বলেন-

While we were in the mosque, the prophet came out side, “let us go to the Jews,’ we went out till we reached bait-ul-midras. He said to them, “If you embrace islam, you will be safe’

অর্থাৎ পয়গম্বর ইহুদিদের মুসলমান হওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছেন। বলা বাহুল্য, এইটেই জেহাদের খাটি ও সর্বোত্তম পদ্ধতি। হাদিস এরপর বলছে ইহুদিরা এই প্রস্তাবে রাজী হয়নি, তখন হযরত মুহাম্মদ বলেন,

“You should know that the earth belongs to allah and his Apostle and I want to expel you from this land. (Hadis No. 392 of Sahih al bukhari– vol–iv)

অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত ধন সম্পত্তিই মুসলমানের হকের পাওনা। কেননা আল্লাহ ও তার রসুলই তার মালিক। আর এই হাদিস অনুসারেই যে কোন বিধর্মীর সম্পত্তি যে কোন মুসলমান কেড়ে নিতে পারে এবং গনিমতের মাল হিসেবে নির্দ্বিধায় ভোগ করতে পারে। এই হল হাদিসের কথা।

দেখা যাক, এ ব্যপারে কোরান কি বলে। “সুরাতুল তওবায়’ স্পষ্টাক্ষরে লেখা আছে, ‘যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না ও পরকালেও না এবং সত্য ধর্ম অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে অনুগত্যের নির্দশন স্বরূপ স্বহস্তে জিজিয়া কর দেয়। (কোরান-৯/২৯)

পৌত্তলিকদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক কেমন হবে সে কথাও কোরানে আছে। মহান হজের দিন আল্লাহ ও তার রসুলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এ এক ঘোষণা যে, আল্লাহর সাথে পৌত্তলিকদের কোন সম্পর্ক নেই এবং রাসুলের সঙ্গেও নয়।(কো-৯/১,২,৩)

 সেই সুত্রে  পৌত্তালিকদের নির্বিচারে হত্যার আয়াতটিও নাজিল হয়।

সুরাতুল তওবার (সুরা-৯) ৫নং আয়াতে লেখা আছে “নিষিদ্ধ মাস অতীত হলে পৌত্তলিকদের যেখানে পাবে বধ করবে, বন্ধী করবে এবং ঘাটি গেড়ে ওত পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে এবং যথাযথ নামাজ পড়ে ও জাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। (কো-৯/৫)

“আল্লাহ বণি-আরব-বহুত্ত্ববাদীদের ইসলাম গ্রহন বা হত্যা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প দেননি। যদি তারা ইসলাম গ্রহণে অসম্মতি জানায় তাহলে তাদের মুসলমানদের সাথে চুক্তি করার ও তাদের জিম্মি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। মুসলমানরা যদি তাদের আক্রমণ করে তাদের মহিলা ও শিশুদের বন্দী ও পুরুষদের যদ্ধবন্দী করে তাহলে মেয়েরা ও শিশুরা অমুসলিমদের কাছ থেকে বিনা যুদ্ধে অর্জিত সম্পত্তির মত বিবেচিত হবে এবং তাদেরকে যুদ্ধলব্ধ মাল হিসাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। পুরুষদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তারা হবে মুক্ত, কিন্তু যারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের হত্যা করতে হবে। (মজিদ খদ্দুরী, মুসলিম আন্তর্জাতিক আইন, পৃ-২৩৮)

আল্লাহর নবী অমুসলিমদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন–

১। কিতাবধারী অর্থাৎ ইহুদি ও খ্ৃষ্টান এবং

২। যাদের নিকট কিতাব অবতীর্ণ হয়নি অর্থাৎ পৌত্তালিক।

ভারত উপ মহাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। হযরত মুহাম্মদ প্রথম শ্রেনী অর্থ কীতাবধারীদের প্রতি কিছুটা নমনীয় ছিলেন। কারন এই ধর্ম গুলো সেমেটিক। এ কারনে এদেরকে জিজিয়া কর প্রদান করে ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেন। যদিও জিজিয়ার উদ্দেশ্যই হলো চুড়ান্ত ধর্মীয় লক্ষ্য অর্জন, শ্ত্রুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস সাধন নয়। নিয়ম অনুসারে ভারতীয় সুলতানগন ভারতবর্ষের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণ বা হত্যা ছাড়া আর কোন পন্থা নির্ধারণের হেতু নেই। যদিও ইসলামের উপর এ ধরনের সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া হয়েছে যে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সেইটিই ইসলাম মতে সঠিক বলে গণ্য হবে। তবে তাকে অবশ্যই চুড়ান্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই হাদিসটি হল- “আবু ইউসুফের মতে যুদ্ধবন্দীদের ভাগ্য নির্ধারণ তথা মুসলমানদের স্বার্থে তাদের হত্যা করা অথবা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিতে হবে বা নির্ধারণ করার ভার ইমামের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’ (আবু ইউসুফ, কিতাব আল রাদ, পৃ-৮৮-৮৯)

ভারতীয় সুলতানগণ কোরান ও হাদিসের নিয়মগুলো প্রয়োগ করতেন আলেম ও মাওলানাদের ব্যখ্যার উপর নির্ভর করে।  সুলতান আলাউদ্দিন জ্ঞানীদের নিকট এমন একটি পন্থা বা নিয়ম জানতে চাইলেন যা দ্বারা হিন্দুদেরকে শায়েস্তা করা যায়। জ্ঞানীগণ পরামর্শ দিলেন, শুধু হিন্দুদের নিকট যেন এই পরিমাণ মাল দৌলত না থাকে যা দিয়ে তারা ভাল অস্ত্র কিনে ভাল পোষাক পরে ও মনোমত ভোগ সম্ভোগ করে দিন কাটাতে পারে। ক্ষত্রিয়দের নিকট খেরাজের কোন অংশই মাফ করা হবে না।

এই হিসাব মতে ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার হাতে নেওয়া, ভাল কাপড় পরা, পান খাওয়া প্রভ্ৃতি কাজ বন্ধ হয়ে গেল। বস্তুত হিন্দুদের ঘরে এমন কোন সোন, চান্দি ও তস্কা অবশিষ্ট ছিল না যার বলে তারা মাথা তুলে দাড়াতে পারে। এই প্রকার অসহায় অবস্থার ফলে হিন্দুর বাচ্ছারা মুসলমানদের ঘরে চাকুরী ক্রএ দিন যাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। (জিয়াউদ্দিন বারাউনী, তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী; পৃষ্ঠা-২৩৭) এখানে আমরা দেখছি যে, কোরানের বাণী “হয় ইসলাম গ্রহণ নতুবা হত্যা’ এই ব্বিধান মানা হয়নি। কারন, আলেম ও শাষনকর্তাগণ বুঝেছিলেন, এই ব্যবস্থা নিলে ভারতীয়রা বিদ্রোহ করতে পারে এবং তাহলে তাদের এদেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই মূল লক্ষকে সামনে রেখে একটু কৌশলগতভাবে এগিয়েছিলেন। আমরা দেখছি, এই কৌশলগত এগোনোরও হাদিস আছে, আছে ঐতিহাসিক পটভূমি। ৬২৪ খৃষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধে অনেক পৌত্তালিক কোরেশ বন্দী হলে মুহাম্মদের নিকট দুটি প্রস্তাব আসে। আবু বকর প্রস্তাব করেছিলেন, এদের সকলকেই মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। অন্য একটি প্রস্তাব আসে হযরত ওমরের কাছ থেকে। তিনি সব পৌত্তালিকে সংহার করার প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ মধ্যাবস্থা অবলম্বন করেন। তিনি কিছু বন্ধীকে হত্যা করেন ও বাকিদের মুক্তিপনের বিনিময়ে ছেড়ে দেন। এখানে হযরত মুহাম্মদের উদ্দেশ্য ছিল বাকিদের ইসলামে টেনে আনা এবং তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন।

তাই এই আয়াত টি মুহাম্মদের জীবনের আলোকে মিলিয়ে নিলে এর অর্থ দাড়ঁড়ায় এই রূপ-

১। ইসলমা গ্রহনের সম্ভাবনা না থাকলে বন্দীদের ব্যপকবাভে নিপাত করতে হবে।

২। অল্পাংশের কাছ থেকে নিতে হবে মুক্তিপণ। অবশ্য আবু বকর বাইজেনটাইন যুদ্ধের সময় মত পরিবর্তন করেন যা আমরা পূর্বেই উল্ল্যেখ করেছি–“হয় মুসলমান হওয়া, না হয় হত্যা’