লিখেছেন মিজানুর রহমান
ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে কি বেহেস্তে যাওয়া যায়?
হয়ত যায়। ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইলের তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশ নামক দেশে ইসলামপন্থী একদল উগ্রবাদী, মৌলবাদী গোষ্ঠী মৃত্যুর পর বেহেস্তি ৭০ টি হুরের নেশায়, প্রবল যৌন আকাঙ্ক্ষা থেকেই হয়ত নিরপরাধ মানুষ হত্যার নেশায় লালায়িত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ দেশে বিবিধ সমস্যার মধ্যে ঝেঁকে আছে ধর্মীও গোঁড়ামি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও উগ্রপন্থার মত দাঁড়ি টুপিওয়ালা খচ্চরগুলো।
গত ৫ই আগস্টের পর দেশে নতুন করে সামনে এসেছে মুক্তচিন্তার এক শ্রেণীর মানুষকে অতি উৎসাহে হত্যার মধ্য দিয়ে বেহেস্তে যাবার স্বাদ। এরা সবাই উগ্রবাদী ইসলামপন্থী একটি শ্রেণী। যারা বিগত সময়ের মত; যেমন ২০১৩ সালে চরমপন্থী একটি গোষ্ঠী ৮৪ জন ধর্ম নিরপেক্ষ ব্লগারদের একটি খুনের তালিকা প্রকাশ করেছিলো।
যে মুহূর্তে আমরা একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি, ভুলতে চেষ্টা করছি ব্লগার ফয়সাল আরেফিন দীপনের টুকরো টুকরো করে ফেলা মৃতদেহ, লেখক, ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকন্ড সহ ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রী নিলের মত বিঞ্জান মনষ্ক লেখকদের হত্যাকান্ডের দুর্বিষহ স্মৃতি। এখন ঠিক এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন অবয়িধ ড. ইউনূসের সরকারের মধ্যে থাকা মৌলবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্র শিবিরের রাজনীতি থেকে উঠে আসা উপদেষ্টা নাহিস ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আধ্যাত্মিক নেতা খ্যাত মাহফুজ আলমদের মদদে দেশব্যাপী মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন করে ইসলামী উগ্রবাদ, মৌলবাদ ও জঙ্গি সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যে দেশে নাস্তিক, সমকামী ও উভকামী সহ মুক্ত চিন্তার মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
এই ধরণের উগ্র মৌলবাদ গে, লেসবিয়ান ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের একঘরে করেছে। ইসলামপন্থী এসব গোষ্ঠী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু এ জনগোষ্ঠীর মানবিক অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী, হেজবুত তাহ্রীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম ও আল হিকমার মত নিষিদ্ধ ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর পেছনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকা এসব নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের উপস্থিতিই দায়ী।
এ ছাড়াও এই সরকারের ছত্র ছায়ায় থাকা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমের মত জোব্বা পড়ে ঘুরে বেড়ানো ছাত্র নেতাদের উগ্রপন্থা নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। সমসাময়িক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে হিজাপ পড়িয়ে গিয়েছে মৌলবাদীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের মূর্তি অপসারণ চায় হেফাজতে ইসলামের মত উগ্রবাদী ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মগ্ন সংগঠনের নেতারা। অভিযোগ করে, তাঁদের ভাষায় গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে ৯০ভাগ মুসলমানের ধর্মীও বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। এইসব ইসলামপন্থী মোল্লাদের গ্রিক দেবীর মূর্তি দেখেও চেতনাদন্ড দাঁড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় সামনে আসে।
বর্তমান সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সমাজ ও রাষ্ট্রে মুক্ত ও বিঞ্জান মনষ্ক চিন্তার প্রসার সহ গে, লেসবিয়ান, সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার সহ সকলের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে সকল মুক্ত চিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্মীও বিভেদের উগ্রতার মূল উৎপাটনে আওয়াজ উঠাতে হবে।
আমরা পাচারকারী, উগ্রবাদী, খুনি, মাওলানাদের মত বলাৎকারকারী নই। কিংবা বেহেস্তি হুরের সাথে যৌন সংগমের কাম বাসনায় নিজেদের আবিষ্কার করি না। কিন্তু নির্মম পরিহাস এই যে আমাদের হত্যা করা হচ্ছে, নির্বাসিত করা হচ্ছে স্বাধীন ভাবে মতামত প্রকাশের জন্য।
আমি বেড়ে উঠেছিলাম সমকামীতা, নাস্তিকতাকে ঘৃণা করতে করতে। পাশ্চাত্যে এসে বোধোদয় হলো যে আসলে অমানুষ ছিলাম। ভেবেছিলাম আওয়ামী পতনের পর এইসব পশ্চাতপদতার অবসান ঘটবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। আওয়ামী সরকার পতনের পর উগ্রবাদী মৌলবাদের যে সহিংস উত্থান অবলোকন করলাম, তাতে বাংলাদেশের সংবিধান এবং ফৌজদারী দন্ডবিধিতে মৌলিক পরিবর্তন এবং ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার কোনো বিকল্প দেখছিনা।