ট্যাবু একটি ইংরেজিশব্দ, যার অর্থ নিষিদ্ধ, অননুমোদিত। কোনো সমাজে ট্যাবু (taboo) হল একটি অন্তর্নিহিত নিষেধ বা ধর্মীয় বা সামাজিক বেড়াজাল অতিক্রম। কার্যত সকল সমাজে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বর্তমান রয়েছে, আমাদের সমাজের ট্যাবু হচ্ছে প্রেম এবং যৌনতা। বর্তমানে আমাদের সমাজে বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত বিষয় গুলোর মধ্যে একটি হল সমকামীতা। সমকামিতা কি?
সমকামীতা বলতে আমরা অনেকেই বুঝি জেন্ডার আইডেন্টিটি । কিন্তু জেন্ডার আইডেন্টিটি হল মানুষের লিঙ্গের ধরণ, যেমন একজন মানুষ ছেলে, নাকি মেয়ে? আর সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন বা কামনা হল, একজন মানুষের যৌন আবেগ কোন লিঙ্গের প্রতি সক্রিয় সেটাকে বোঝায়।
আর সমকামীতা হল সম লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষন, যা হোমোসেক্সুয়াল নামে পরিচিত। পুরুষ হোমোসেক্সুয়ালদের গে এবনং নারীদের লেসবিয়ান বলা হয়। যাদের নারী পুরুষ উভয়ের প্রতি যৌন আবেগ থাকে তাদের বলা হয় বাইসেক্সুয়াণ। বাংলাদেশে সমকামিতাকে ট্যাবু মানা হয়।
৯০% মুসলমানের বাস বাংলাদেশে , ধর্মের ট্যাবু ভেঙ্গে সমকামিতা প্রকাশ্য হোক, এটা সরকার, সমাজ ও সাধারন জনগণ কেও চাই না। সমকামিতা বিষয়ক ট্যবু কাটাতে করনিয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা পরিবর্তন আমাদের দেশে, দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ৷ এজন্য দশ বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ড, সাথে জরিমানার বিধান রয়েছে৷ বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ,নারী বা জন্তুর সহিত,প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।
কি ভয়ংকর আইন! দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা যদি কোন প্রকার প্রলোভন ও ভয়ভীতি ছাড়া স্বেচ্ছায় বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত জনসম্মুখের অগোচরে যৌনসহবাস করলে তা অপরাধ না হয়। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা দুজন মহিলা কোন প্রকার প্রলোভন ও ভয়ভীতি ছাড়া স্বেচ্ছায় জনসম্মুখের অগোচরে বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত অথবা ভ্যাজাইনাল যৌনসহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে যৌনসহবাস করলে তা কখনো অপরাধ হিসেবে গন্য হতে পারে না।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা আমাদের সমঅধিকার,সমসুযোগ,আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, ন্যাচারাল জাস্টিস ও আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন, এবং উক্ত ধারা মৌলিক মানবাধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় আমার মতে বাতিল বলে গন্য। আমদের এ আইনের পরিবর্তন আনতে সকল মানবাধিকা্র কর্মীর একসাথে কাজ করতে হবে, এবং উন্নত বিশ্বের সহজগিতা লাগবে । ধর্মের জিঞ্জির ছিঁড়ে ফেলতে হবে আমার কাছে খুবই সাভাবিক ভাবে মনে হয় যে ধর্ম একটা বড় প্রভাবক এইসকল ট্যাবু তৈরী করবার ক্ষেত্রে। ধর্মের একটা বড় প্রভাব রয়েছে সমকামিতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের মধ্যে একটি ঘৃণা ও বিভ্রান্তি তৈরী করবার জন্য।
সমকামিতা যে একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার ও এটি একজন মানুষের নিজস্ব পছন্দের ব্যাপার এটি ধর্ম মানে না। যা আমার কাছে তাই মনে হয় আমরা অনেক পিছনে পড়ে যাচ্ছি দিন কে দিন। আর এই ধর্মের এইসব জিঞ্জির না ছিঁড়ে ফেললে সমকামিতার মত স্বাভাবিক বিষয়াদিও আসলে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকবে।
সরকার ও সাধারন মানুষের সহিষ্ণু উদ্যোগ আমাদের দেশে এলজিবিটি দের অধিকার আদায়ে সরকারি উদ্যোগ নেয়া অনেক জরুরী। যদিও হিজড়াদের অধিকার আদায়ে সরকারি উদ্যোগ কখনোই যথেষ্ট নি, নামে মাত্র। আমাদের দেশে ট্রান্সজেন্ডার হয়ে জন্মগ্রহণ করা একটা অপরাধের মতো, সমকামি তো আরো দুরের কথা।
আমদের সমাজে, লুকিয়ে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাক সমকামির সংখ্যা কম নয়। সমকামির সঠিক সংখ্যা আমরা কোনদিন জানতে পাড়োব ণা। কারন, ৯০ ভাগ, সমকামিরা আছে লুকিয়ে। নারীরা নারীর প্রেমে পড়বে, এটা এ সমাজ কোনভাবেই মানবে না। সমকামিরা লাঞ্চিত, নিপীড়নের স্বীকার হতে হতে হীনমন্যতায় ভুগে ভুগে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। যার ফলে আমরা অনেক মেধাবি ও দক্ষ জনশক্তি হারাচ্ছি, দেশ পিছিয়ে পড়ছে। তাই আমার মতে, সরকারি ও সাধারন মানুষের সহিষ্ণু উদ্যোগ ই পারে, এলজিবিটি দের অধিকার দিয়ে, উন্নত বিশ্বের সাথে এগিয়ে চলা।
প্রয়োজনীয় পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সর্বস্তরে, হোক সে পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক, সঠিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন, গবেষকদের মতে, হোমোসেকসুয়ালিটি ব্যক্তিগত চয়েস, এর পিছনে বায়োলজিক্যাল বা জেনেটিক্যাল কোন যোগ নাই। তাই আমদের পাঠ্যবইয়ে সমকামিতা নিয়ে পাঠ রাখাটা খুব জরুরি।
তাহলে শিশুকালে, কমলমতি শিশুগুলি আর হীনমন্যতায় ভুগবে না। ব্যহত হবে না সমকামি শিশুদের কৈশোর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলে তারা সমাজ ও পরিবারকেও বোঝাতে পারবে খুব সহজেই। আনেক বাচ্চার কিছু মাইনর প্রব্লেম থাকে, হয়তবা তারা সুশিক্ষা ও সমাজের সহযগিতা পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।
সকল সমকামিদের এগি্যে আসতে হবে একসাথে আমাদের দেশে আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা সকল সমকামিদের এগিয় আসতে হবে একসাথে। তাদের অধিকার তাদেরই আদায় করে নিতে হবে। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মত, তাদেরো রয়েছে সুকল অধিকার।
নিজেদের অধিকারে সোচ্চার থাকতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমার শরীর, আমার মন, দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিজেদের সম্মতিতে চার দেয়ালের ভিতর কি করবে না করবে সেটা রাষ্ট্র ঠিক করে দিতে পারেনা।