লিখেছেন গাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম / ০৫ নভেম্বর ২০২৫ – ১০:৪৪ ঘটিকা

Written By Gazi Md Saiful Islam / 05 November 2025 – 10:44 AM 

সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৪ বছরে এ দেশের সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ইসলামপন্থী উগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভাব, আধিপত্য ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আদর্শিক জায়গাগুলোতে কতটা নির্মূল করা গিয়েছে? তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মান্ধ মুসলিমদের মনস্তাত্ত্বিক রেখার ইসিজি ওয়েভ থেকে নির্ধারিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭১-১৯৭৫ সালে ইসলামের উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও মওদুদিবাদের ফতোয়ায় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা হয়। একই সাথে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের দর্শনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা অর্জনে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে ঐতিহাসিক ধারণা, এটিকে সুসংহত করে।

কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একটি সামরিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেন। এবং এর মধ্য দিয়েই বিএনপির যে জাতীয়তাবাদ, ইসলামী শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠায় মগ্ন একটি উগ্র, অপাংক্তেয় জামায়াতের ইসলামি জাহেলিয়াতের শরিয়ার সাথে একীভূত হয়ে নিজস্বতা হারায়।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন  ও (২০০১-২০০৬ জামায়াত-বিএনপি) জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আদর্শিক জায়গাগুলোকে ধর্মীয় উগ্রবাদ, ফতোয়া, শরিয়ার ব্যভিচারে স্বাধীনতার মূল তত্ত্বকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট স্বাধীনতার স্বপক্ষে রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে বর্তমানে আবারো ইসলামী উগ্রবাদী গোষ্ঠী রাজনীতির নামে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ফ্রন্টের ব্যানারে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ উগ্রবাদী ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রভাবিত করছে তরুণদের রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি (যাদের মধ্যে ইসলামপন্থী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সমন্বয়) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকেও।

বিএনপিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যদি বলা হয়, The First Embrace of Fundamentalism, এটি যৌক্তিক ও অর্থপূর্ণ। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে দেখা যাচ্ছে ধর্মের টুপি মাথায়, মসজিদ, মাদরাসা কিংবা রাষ্ট্রে ইসলামী শরিয়ার কালো পতাকায় যে উগ্রবাদী গোষ্ঠী জাহেলিয়াতের ফতোয়ায় রাষ্ট্রের ’৭২-এর সংবিধানকে ছুড়ে ফেলতে চায়, সেই রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ইসলামকে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ বর্জন করেছিল; সেই ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে ফিরে গিয়ে স্বাধীনতার অস্তিত্বকে একদল মওলবাদী, উগ্র, ফতোবাদী ও শরিয়াহ থেকে আসা জঙ্গিবাদের দিকে একটি দেশের আগামী ভবিষ্যত হস্তান্তর করতে চায়।