ফারজানা ইসলাম, যুক্তরাজ্য

নামাজের ওয়াক্তে এখন থেকে লক্ষ্মীপুর শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে। পৌর মেয়র আলহাজ্ব আবু তাহের মুসসলমানদের পাশাপাশি হিন্দুদেরও দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাহের সাহেব আওয়ামী লীগ করেন এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। গত রবিবার শহরে পৌরসভা থেকে মাইকিং করে বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। এই ঘোষণাতে লক্ষ্মীপুরের সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। সর্বস্তরের জনগণ যে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই কারণ জনগণ ইসলাম প্রেমি আর ইসলামে ‘কোন জবরদস্তি নেই’!

হিন্দু ভাইরা নামাজ না পরেন ভাল কথা, কিন্তু আজানের সময় দোকান খোলা রেখে ব্যবসা করবেন তা হবে না। পছন্দ না হলে বাপের দেশ ইন্ডিয়াতে চলে যাবেন! মনে করছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে আপনাদের চাঁনরাত? দেশ স্বাধীন হবার পর আওয়ামী লীগ আপনাদের ডাকছিল? ডাকে নাই। আপনারাই নিজে থেকে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধারা কি মালুদের সমঅধিকার দিতে যুদ্ধ করছে? এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারবেন কোন মুসলমান অমুসলমান মুসলমান সবার অধিকারের জন্য নিজের জীবনবাজি রাখে?

রংপুরে উড়ো চিঠি আর লিফলেট লিখে হিন্দুদের দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে মিনি শরীয়া আইন জারি। জনগণ যখন শরীয়া চাচ্ছে তাহলে আর দেরী কেন? এমন না যে এদেশে সেক্যুলার বলতে আরেকটি শক্তিশালী জনগণের অবস্থান আছে। সেক্যুলার বলে ইসলামপন্থিরা যাদের এতকাল অপবাদ দিয়েছিলো তারা সকলেই প্যান ইসলামিজমে বিশ্বাসী। মুসলমান বলে তাদের আলাদা একটা সত্ত্বা আছে যেটা হিন্দু পাহাড়ী আদিবাসী থেকে নিজেদের সব সময় আলাদা রাখত। নিজেকে তারা ‘বাঙালী মুসলমান’ ভাবেন। নিজেকে ‘আরব মুসলমান’ কিংবা ‘পাকিস্তানী মুসলমান’ নয়, ‘বাঙালী মুসলমান’- এই স্বকীয়তা খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধারাতেই ইসলামপন্থিদের সঙ্গে তাদের বিভক্তি নেমে আসে ৪৭ সালের দেশভাগ পরবর্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রে। এরাই এখন বাম, লীগ, উদার, মধ্যম ইত্যাদি পরিচয়ে বিভক্ত হলেও শেকড় একই। এ কারণেই দেখবেন কোন বামকেও লক্ষ্মীপুরের নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার ঘটনায় তারা পাল্টা ভারতে গরু জবাই করলে মুসলমানদের কি কি ভাবে নাজেহাল হতে হয় সেটা আপনাকে শুনিয়ে দিবে।

তো এখন আমি চাই দেশে শরীয়া দ্রুত চলে আসুক। শরীয়া না এলে ইসলামের আসল মজা এদেশে জনগণ বুঝতে পারবে না। কঠিন একটা শিক্ষা হওয়া দরকার এদের। ‘মুসলমানদের দেশ পাকিস্তান’ বানিয়ে মাত্র ৯ মাস শরণার্থী শিবিরে থাকাই কাল হয়েছে। অন্তত পক্ষে ৯ বছর শরণার্থী শিবিরে থাকলে কিছুটা শিক্ষা হতো। শরীয়া একবার এলে আর জীবনে এর নাম মুখে আনবে না…।